সামান্য কিছু ভুলের কারনে অপ্লবয়সে স্কিনে বয়সের ছাপ পড়ে , স্কিনে ভাজ পড়ে আর পঞ্চাশের পর পুরোপুরি আশি বছরের বৃদ্ধই হয়ে যায় এই দেশের নারী এবং পুরুষরা অথচ আমরা দেখি অনেক দেশের মহিলাদের যারা ৫৮ -৫৯ বছর বয়সেও বিয়ে করেন। তাই আজকের আলোচনার বিষয় হল বয়স ধরে রাখার উপায়, ৬০ বছর বয়সেও যেন আপনাকে ৩৫ বছরের যুবতী বা যুবক মনে হয়। আমরা অনেক পরিশ্রম করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডাক্তার এবং বিউটিশিয়ানদের আলোচনা থেকে মুল বিষয়গুলি সংগ্রহ করে এখানে একত্রিত করে উপস্থাপন করেছি , তাই প্রতিটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং শেষে রয়েছে কিছু ম্যাজিকাল টিপস। সুতরাং আপনার স্বার্থেই সম্পূর্ন লেখা অতি মনোযোগ দিয়ে পড়া উচিত। আজকের আলোচনার বিষয় হল দুটি--------- ১) বাহ্যিকভাবে ত্বকের যত্নঃ *** ত্বকে মেকাপ যত কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো কিন্তু রেগুলার সমস্ত শরীরে শীত কিংবা গরম হোক প্রতিদিন একাধিকবার মশ্চেরাইজার ব্যবহার করতেই হবে হবে হবে……… এর কোন বিকল্প নেই। ** দৈনিক রাতে মেক-আপ রিমুভার দিয়ে মেক-আপ পরিস্কার করতে হবে ( যদি মেক-আপ করা থাকে) , তারপর একটি ভালো ব্রান্ডের ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ মন্ডল ধৌত করতে হবে, এরপর মুখ মন্ডলে কটন প্যাডের মাধ্যমে একটি ভালো মানের টোনার দিতে হবে, এরপর একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সেরাম(serum) ব্যবহার করতে হবে। তারপর মুখ মন্ডলে মশ্চেরাইজার দিতে হবে, তবে অবশ্যই গরমের দিনে ওয়াটার বেজড মশ্চেরাইজার ব্যবহার করতে হবে । এগুলি তো করতে হবেই এর সাথে সাথে সারা শরীরেও মশ্চেরাইজার দিতেই হবে। শীত হোক কিংবা গরম হোক প্রতিদিন এই নিয়মগুলি পালন করতেই হবে। ** প্রত্যেকদিন সকালে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ মন্ডল ধৌত করতে হবে, এরপর মুখ মন্ডলে কটন প্যাডের মাধ্যমে একটি ভালো মানের টোনার দিতে হবে, সকালে সেরাম(serum) ব্যবহার না করাই ভালো কিন্তু মুখ মন্ডলে মশ্চেরাইজার দিতে হবে, তবে অবশ্যই গরমের দিনে ওয়াটার বেজড মশ্চেরাইজার ব্যবহার করতে হবে এরপর অবশ্যই মিনিমাম SPF 50 সমৃদ্ধ সানস্ক্রীন ব্যবহার করতে হবে, তবে spf আরো বেশী হলে ভালো এবং প্রতি দুই ঘন্টা পর পর এটা লাগাতে হবে। ** দিনে বাহিরে বের হন বা না হন, সূর্যের আলো শরীর স্পর্শ করুক বা না করুক sunscreen ব্যবহার করতেই হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মিনিমাম SPF 50 সমৃদ্ধ সানস্ক্রীন ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতি দুই ঘন্টা পর পর এটা লাগাতে হবে। আরো একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল কোন কিছু রান্না(Cook) করতে যাওয়ার ২০ মিনিট পূর্বে অবশ্যই আপনাকে sunscreen ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি শুধু নিয়মিত sunscreen ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বয়সের থেকে আপনাকে সবসময় ১০ বসরের ছোট মনে হবে। অবশ্যই শরীরে vitamin D এর চাহিদা পূর্ন করতে সকাল ১০ – ২ টার মধ্যে পিঠে রৌদ্র লাগাতেই হবে ( তবে কোন ক্রমেই মুখে রৌদ্র লাগানো যাবেনা) কারন ভিটামিন-ডি ছাড়া সুস্থ্য থাকা অসম্ভব , সুর্যের আলো সরাসরি স্ক্রীনে না পড়লে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয় না অর্থাৎ জামাকাপড়ের উপরে রোদ পড়লে সূর্যের আলো কোন উপকার আসেনা। তাই উন্মুক্ত পিঠে রোদ লাগানো উচিত এবং একই সাথে অর্গানিক ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট খাবেন পাশাপাশি সামুদ্রিক ফিশ অয়েল খেতে হবে। ** বাহির থেকে এসেই প্রথমে পানির ঝাপটা মুখে দিয়ে মুখমণ্ডল ধৌত করতে হবে , এরপর যদি সম্ভব হয় তাহলে টক দই, মধু এবং হলুদের গুড়া মিক্স করে একটি প্যাক তৈরি করে মুখ এবং ঘাড়ে দিলে ত্বকের পোড়া ভাবটা দূর হয়। তারপর ব্রান্ডের ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ মন্ডল ধৌত করে একটি মশ্চেরাইজার দিতে হবে । ****৮। স্কিনকে ২৫ বছর বয়সের মত টানটান ও প্রানবন্ত করার জন্য মশ্চেরাইজার হিসেবে অবশ্যই Tallow Natural Moisturizer ( ঘাস খাওয়া গরুর চর্বি ) ব্যবহার করতে হবে। **৯। সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন একটি ভালো ব্রান্ডের স্ক্রাব দিয়ে exfoliate করতে হবে। ২) ভিতরগতভাবে ত্বকের যত্নঃ *** একমাত্র ঘুমের সময় শরীর নিজেকে মেরামত করে, স্কিনে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং স্কিন তার কোলাজেন পুনর্নির্মাণ করে এর ফলে আপনি স্কিনের ভাজ বা কোচকানো স্কিন থেকে মুক্তি পান । রাতের একটি ভাল ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে 7 থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। কম ঘুম স্কিনের ব্যারিয়ার ফাংশনকে অকার্যকর করে দেয় ফলে স্কিন থেকে অনেক পানি বের হয়ে স্কিনকে প্রচন্ড শুস্ক করে দেয়। কম ঘুমের কারনে গ্রোথ হরমোন লেভেল কমে যায় ফলে স্কিনের থিকনেস কমে যায়, স্কিনের কোলাজেন এবং ইলাস্টিকতা নস্ট হয়ে যায় যার ফলে স্কিন কুচকে যায় এবং স্কিন লুজ হয়ে ঝুলে পড়ে। এছাড়াও ভালো ঘুমের কারনে শরীরের প্রদাহ ( inflamation) খুব দ্রত কমে যায়, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, মাসল বাড়ে……তাই ঘুমের কোন বিকল্প নেই, রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমাতে হবে এবং ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠতে হবে। তবে ভোর ৫টার পরে বিছানায় থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। *** সুগারকে বিষ বলা হয়, যে যত বেশী সুগার খাবেন সে তত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধ হবেন। কোলাজেন স্কিনকে শক্তিশালী করে, স্কিনকে আদ্র করে এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল স্কিনকে সবসময় টানটান রাখে অর্থাৎ স্কিনে কোন ভাজ বা বলী রেখা পড়তে দেয়না সুতরাং তারুন্য ধরে রাখার মুল অস্র হল এই কোলাজেন কিন্তু এই সুগারের কারনেই কোলাজেন সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বা ধবংস হয়। প্রোটিন যদি সুগার বা কার্বোহাইড্রেট এর সাথে একত্রে খাওয়া হয় তাহলে সাথে সাথে রক্তে সুগার এর মাত্রা প্রচুর বেড়ে যায় ফলে ইনসুলিনও বেশী নির্গত হয় , আর এই ইনসুলিন ফ্যাট রিজার্ভ করে রাখে। তাই ফ্যাট কমানো সম্ভব হয়না। সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল প্রোটিনের সাথে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার খেলে রক্তে নাটকীয়ভাবে প্রচন্ড সুগার বেড়ে যায়, এই সুগার স্কিনের কোলাজেনকে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে খুব দ্রুত স্কিন কুচকে যায়। অর্থাৎ প্রোটিন+ কার্বোহাইড্রেট= বুড়িয়ে যাওয়া স্কিন। তাই মাংস বা ডিমের সাথে রুটি কিংবা ভাত খাওয়া যাবেনা, মিস্টি সস দিয়ে মাংস খাওয়া যাবেনা, মিস্টি পুডিং খাওয়া যাবেনা । সালাদ বা ভেজিটেবলের সাথে ডিম বা মাংস খাওয়া উচিত। ফাইবার (vegetables ) একমাত্র কার্বোহাইড্রেট যা ইনসুলিনে কোন ইফেক্ট করে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আমাদের কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং কোলাজেনের সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। আবার একইভাবে যদি ফ্যাটের সাথে সুগার বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়া হয় তাহলেও রক্তে প্রচন্ড সুগার বেড়ে যায় । অর্থাৎ ফ্যাট+ কার্বোহাইড্রেট/সুগার= বুড়িয়ে যাওয়া স্কিন। যেমন আইসক্রিম, মাখন ও চিনি। এই আইসক্রিমের মধ্যে ফ্যাট এবং সুগার দুটিই আছে। তাই এই জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। এখানে বলে রাখা ভালো—শুধু ফ্যাট খেলে রক্তে সুগার বা ইনসুলিন বাড়েনা কিন্তু প্রচুর শক্তি পাওয়া যায়, ভালো ফ্যাট হল – কোল্ড প্রেসড অর্গানিক অলিভ অয়েল , ডিম, ফিশ অয়েল, ফিশ। প্রোটিনের মত ফ্যাটও শাকসবজি বা সালাদের সাথে খেতে পারেন অথবা শুধু ফ্যাট খেতে পারেন। তাই ১০০% সুগার ফ্রি খাবার খেতে হবে, কোন বিকল্প নেই। ভর্তা , শাকসব্জি দিয়ে অল্প ভাত খান এবং একঘন্টা পর সালাদ বা শাকসব্জি দিয়ে ডিম, মাছ বা মাংস খান ……… তাছাড়া রুটি , গোল আলু, মূড়ি , খই , যেকোন বিস্কুট , যে কোন পিঠা খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। সর্বশেষ কথা হল রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রন করতেই হবে। *** কোলাজেন বৃদ্ধির ফুডঃ Bone Broth( হাড়ের স্যুপ), প্রোটিন ( ডিম/ ফিশ/ চিকেন/ গরুর মাংস) ,Yogurt, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ( ফিশ অয়েল, ওয়াল নাট, ফ্যাটি ফিশ) , Extra virgin olive oil ,সবুজ শাক ( পালং শাক) , বীট , ভিটামিন সি ( লেবু/কাচা মরিচ) – ফ্রি রেডিক্যাল ধবংস করে অর্থাৎ সুগার কমায়,গার্লিক , আলমন্ড । ***আধা ঘন্টা পর পর একটু একটু পানি খান। পানি স্কিনকে অনেক সুন্দর রাখে এবং শরীরকে রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখে। *** প্রতিদিন সকালে অবশ্যই ১০০% খালি পেটে ৪৫ মিনিট দ্রুত গতিতে হাটতে হবে। সকালে ব্যায়াম করে এসে লেবুর পানি খাওয়া উচিত (তবে লেবু পানি রেগুলার না খেয়ে মাঝে মাঝে খাওয়া ভালো )। ৪৫ মিনিট পরে সকালের নাস্তা খাওয়া উচিত। ** ফুটন্ত তেলে ভাজা খাবার থেকে ফ্রি রেডিকেল উৎপন্ন হয় যা চামড়ার elasticity কে নস্ট করে দেয় ফলে অল্প বয়সেই স্কিন কুচকিয়ে যায়। এবং অতিরিক্ত লবনের কারনে যেমন স্ট্রোক হয় তেমনি স্কিনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। fast food সহ যেকোন ধরনের বাহিরের খাবার ত্যাগ করতেই হবে। ধুমপান এবং অ্যালকোল পান করলেও খুব দ্রুত স্কিক কুচকে যায়। ** সকালের রান্না করা খাবার সকালেই খাওয়া উচিত , এটি দুপুরে না খাওয়াই ভালো। রান্না করা খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খাওয়া যাবেনা। দ্বিতীয়বার গরম করলে এসিড তৈরি হয়। ** নিয়মিত ফ্রেশ ফলফ্রুট খেতে হবে তবে যেসব ফলে প্রচন্ড সুগার বাড়ে সেগুলি পরিমিত হারে খেতে হবে । প্রচন্ড সুগার সমৃদ্ধ ফল হল – আনারস, তরমুজ , কলা, খেজুর এবং আম। তবে ফলমূল অবশ্যই যে কোন খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অথবা ১ ঘন্টা পরে খাওয়া উচিত । *** কোল্ড প্রেসড অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদ খেতে হবে কিন্তু কোনভাবেই এই তেল রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়া উচিত না এবং নিয়মিত কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল খেতে হবে। সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে জিংসেন খাওয়া যেতে পারে তবে একটানা একমাসের বেশী খাওয়া উচিত না, একমাস গ্যাপ দিয়ে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এই ginseng এইজিং প্রসেসকে স্লো করে দেয় এবং রক্তের সুগার হ্রাস করে। প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে কারন এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে রক্ষা করে ফ্রি রেডিক্যাল এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট সবুজ শাকসবজি , চা, গ্রীন টি, কফি , Broccoli, spinach, carrots, আমলকির মধ্যে থাকে। ***অবশ্যই ভিটামিন- এ, ভিটামিন –ই এবং ভালো ফ্যাট (ফিশ অয়েল, ওয়াল নাট, ফ্যাটি ফিশ, কাঠ বাদাম, Extra virgin olive oil) এবং ভালো প্রোটিন(ডিম/ ফিশ/ চিকেন/ চর্বি হীন গরুর মাংস) খেতে হবে। ভালো ফ্যাট + ভালো প্রোটিন = স্বাস্থকর স্কিন। *** শরীরের বর্জ্য বা বিষ দূর করতে হলে সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখুন, তবে ইফতারিতে কোন সুগার আইটেম এবং ভাজা পোড়া খাবার রাখা চলবেনা। প্রতিদিন অবশ্যই সন্ধ্যা ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৭ টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করুন।
read moreডায়াবেটিস কেন হয়ঃ যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার ( চিনি, ভাত, আলু, রুটি, বিস্কুট, মুড়ি) খাই, তখন তা পেটে গিয়ে ভেঙে গ্লুকোজে (সুগার) পরিণত হয় এবং এই গ্লুকোজ বা সুগার রক্তের মধ্যে চলে যায়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে মানুষের দেহের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেওয়া। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না বা কোষে ঢুকতে পারবে না , তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগার বা গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় , তখনি আমরা একে ডায়াবেটিস বলি। সাধারণত প্রসাবের মাধ্যমে কিছু গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। দুটি কারনে রক্ত থেকে গ্লুকোজ (সুগার) কোষে পৌছায় না। প্রথমতঃ সাধারন ভাষায় বলা যায় চর্বি বা বিষাক্ত পদার্থের কারনে কোষগুলি Over loaded (ভরা) থাকে, ফলে কোষে জায়গা না থাকার কারনে সুগার বা গ্লুকোজ ঢুকতে পারেনা । অর্থাৎ ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগার নিয়ে কোষে সরবরাহ করতে পারেনা কারন কোষে জায়গা নাই। যার ফলে রক্তে সুগার বেড়ে যায়। এই ধরনের ডায়াবেটিসকে আমরা টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলি। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের অধিকাংশই( প্রায় ৯০%) টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আপনি চাইলেই এই টাইপ ২ ডায়াবেটিস শরীর থেকে পুরোপুরি নির্মুল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দরকার একটি ভালো লাইফ স্টাইল ফলো করা এবং সচেতন থাকা। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মগুলি মানতে হবে- **১। প্রথমেই ভাত, রুটি , আলু, বিস্কুট, চিনি, মুড়ী অর্থাৎ শর্করা জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে তাহলে রক্তে নতুন করে সুগার বাড়বে না। শাকসবজির মধ্যেও কার্বোহাইড্রেট থাকে , সুতরাং কার্বোহাইড্রেট এর ঘাটতি ফ্রেশ শাকসবজি খেয়ে পূরন করতে হবে। অবশ্যই ভাত, আলু, বিস্কুট, চিনি, চানাচুর, মুড়ী, খই এগুলি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে অবশ্যই শাকসবজি খেতে হবে প্রচুর। তবে ব্রাউন চালের ভাত (সাদা ভাতের পরিবর্তে ঢেকি ছাটা চাল বা নিজেদের তত্ত্বাবধানে ধান থেকে পাওয়া চালের ভাত ) অথবা গমের ব্রাউন আটার রুটি সামান্য পরিমান গ্রহণ করতে হবে। অবশ্যই রাতের খাবার ৭ – ৭:৩০ এর মধ্যে শেষ করতে হবে। **২। বিষে ভরা কোষকে খালি করা - এই নিয়মটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ন । নিয়মটি হল- প্রত্যেক দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করে একদম ১০০% খালি পেটে ( অর্থাৎ পানিও খাওয়া যাবেনা ) মিনিমাম ৪৫-৬০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাটার মাধ্যমে আপনি আপনার বিষে ভরা কোষকে বিষমুক্ত করতে পারেন , সকালে ব্যায়াম করে এসে মাঝে মাঝে এক গ্লাস পানিতে পরিমান অনুযায়ী লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন এবং একই সাথে সপ্তাহে একটি কিংবা দুটি রোযা রাখতে হবে আপনার বিষে ভরা কোষকে পরিপূর্নভাবে বিষমুক্ত করতে। কোষ ভরা থাকলে insulin resistance এর উদ্ভব হয় এবং এটিই হল সব রোগের মূল রোগ , তাই insulin resistance আছে কিনা তা দেখতে HOMA-IR test করানো উচিত। একটি কথা উল্লেখ করতেই হবে- এই insulin resistance প্রায় সব রোগের মূল বা শিকড়। তাই শুধু ডায়াবেটিস না অন্যান্য রোগ থেকে মুক্ত থাকতে চাইলেও অবশ্যই insulin resistance চেক করানো উচিত। ডায়াবেটিসের জন্য রক্তে সুগার টেস্ট করে দেখলেন যে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক আছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে insulin resistance হয়ে যাওয়ার কারনে আপনার বড় একটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। **৩। রাত ৯-১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে অর্থাৎ দৈনিক রাতে একটানা ৭-৮ ঘন্টা ডিস্ট্রাবহীনভাবে ঘুমাতেই হবে। ঘুমের কারনে শরীরের কোষ সতেজ হয়, হার্ট ভালো থাকে, মাসল বাড়ে, মানসিক চাপ কমে এবং ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করতে হবে। ভোরের বাতাস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ভালো ঘুম ইনফ্লামেশন কমায় নাটকীয়ভাবে, সুতরাং ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। **৪। অবশ্যই শরীর সুস্থ রাখার জন্য এবং শক্তির জন্য ভাল প্রোটিন জাতীয় খাবার ও ভালো ফ্যাট – যেমন, দেশীয় ডিম , টক দই, মাছ, দেশীয় মুরগী, দেশীয় গরুর মাংস ও ভালো ফ্যাট First cold pressed organic olive oil এবং first cold pressed organic coconut oil , বাদাম, খাটি মাখন, খাটি ঘী পরিমিত হারে খেতে হবে। ভাত, রুটি , আলু, বিস্কুট, চিনি অর্থাৎ শর্করা জাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো এবং অবশ্যই এই ভাল প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতেই হবে। তাহলেই দেখবেন ডায়াবেটিস থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। **৫। দিনে খুব অল্প অল্প করে মোট ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। একত্রে বেশি পানি খাওয়া যাওয়া যাবেনা। **৬। ভিটামিন সি (C) সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যা রক্তে উচ্চ গ্লুকোজের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। **৭। অবশ্যই ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং ভিটামিন-ডি এর জন্য উন্মুক্ত শরীরে নিয়মিত রোদ লাগাতেই হবে । **৮। অবশ্যই ধুমপান এবং অ্যালকোহল পরিত্যাগ করতে হবে। **৯। অবশ্যই বাজে তেল খাওয়া যাবেনা । রান্নার জন্য অবশ্যই নিজ উদ্যোগে ভাঙ্গানো সরিষার তেল খেতে হবে অথবা আমাদের অনলাইন শপ ( ultimatestyle.com.bd) এর নিজস্ব স্টেইনলেস স্টীলের মেশিনে ভাঙানো ১০০% নির্ভেজাল এবং কোল্ড প্রেসড সরিষার তেল ক্রয় করতে পারেন। ** ১০) তারুন্য ধরে রাখার মুল অস্ত্র হল কোলাজেন কিন্তু এই সুগারের কারনেই কোলাজেন সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বা ধবংস হয়। প্রোটিন যদি সুগার বা কার্বোহাইড্রেট এর সাথে একত্রে খাওয়া হয় তাহলে সাথে সাথে রক্তে সুগার এর মাত্রা প্রচুর বেড়ে যায় ফলে ইনসুলিনও বেশী নির্গত হয় , আর এই ইনসুলিন ফ্যাট রিজার্ভ করে রাখে। তাই ফ্যাট কমানো সম্ভব হয়না। সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল প্রোটিনের সাথে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার খেলে রক্তে নাটকীয়ভাবে প্রচন্ড সুগার বেড়ে যায়, এই সুগার স্কিনের কোলাজেনকে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে খুব দ্রুত স্কিন কুচকে যায়। অর্থাৎ প্রোটিন+ কার্বোহাইড্রেট= বুড়িয়ে যাওয়া স্কিন। তাই মাংস বা ডিমের সাথে রুটি কিংবা ভাত খাওয়া যাবেনা, মিস্টি সস দিয়ে মাংস খাওয়া যাবেনা। সালাদ বা ভেজিটেবলের সাথে ডিম বা মাংস খাওয়া উচিত। ১১) যেসব ফলে প্রচন্ড সুগার বাড়ে সেগুলি পরিমিত হারে খেতে হবে । প্রচন্ড সুগার সমৃদ্ধ ফল হল – আনারস, তরমুজ , কলা, খেজুর এবং আম। তবে ফলমূল অবশ্যই যে কোন খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে অথবা ১ ঘন্টা পরে খাওয়া উচিত । যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এসব ফল যত কম খাবেন ততই ভালো। ১২) অবশ্যই ভালো ফ্যাট খেতে হবে। যেমন- অলিভ অয়েল দিয়ে সালাদ, ডিম, সামুদ্রিক মাছের তেল। দ্বিতীয়তঃ আমরা জানি অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের হরমোন নিসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরন বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত থেকে দেহের কোষে গ্লুকোজ বা সুগার পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে সুগার বা গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখনি আমরা একে টাইপ ১ ডায়াবেটিস বলি। টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রেও উপরোক্ত নিয়মগুলি ফলো করার পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিসের কারণে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারেঃ রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি হলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সুগারের পরিমাণ বেড়ে রক্তের ঘনত্ব বাড়লে শরীরে রক্ত ঠিক মতো প্রবাহিত হতে পারে না , ফলে যেসব জায়গায় রক্তের প্রয়োজন সেখানে এই রক্ত পৌঁছাতে পারেনা, তখন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে মানুষ দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে এবং ইনফেকশনও হতে পারে । রক্তের প্রবাহ অনেক হ্রাস পাওয়ার কারনে যৌন ক্ষমতা খুবই কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির পেছনেও একটি বড় কারণ ডায়াবেটিস । যেসব খাবার কখনই খাওয়া উচিত নয়ঃ ঘন দুধের তৈরি কোন খাবার, সাদা ব্রেড, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, বাজারের প্যাকেটজাত ফলের জুস, ক্যান্ডি, চিপস, স্পোর্টস ড্রিঙ্কস, সেরিয়াল, চকলেট, এনার্জি ড্রিঙ্কস, সফট ড্রিঙ্কস, ভাজা পোড়া খাবার, খারাপ তেলে রান্নাকৃত খাবার। ডায়াবেটিস পরিমাপঃ Fasting ( ঘুম থেকে উঠে ১০০ ভাগ খালি পেট থাকা অবস্থায় সুগারের পরিমাণ) ৬.১ এর নিচে থাকলে নরমাল অর্থাৎ ডায়াবেটিস নাই, ৬.১ - ৭ এর মধ্যে থাকলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এটাকে বলে pre Diabetic, ৭ এর উপরে থাকলে ডায়াবেটিস, এর পর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে ২ ঘন্টা পর টেষ্ট-- ৭.৮ এর নিচে থাকলে নরমাল, ৭.৮ - ১১.১ এর মধ্যে থাকলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এটাকে বলে pre Diabetic , ১১.১ এর উপরে থাকলে ডায়াবেটিস। ( কিডনী, লিভার , হার্ট বা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এবং গর্ভাবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চলতে হবে)
read more